অপরূপা লন্ডন

0
173
London

ছোটবেলায় বাবা বলতেন, ভাল করে পড়াশোনা কর।পড়াশোনা না করলে খেতে পাবি না। আমি তত বলতাম, আমি লন্ডন (london) যাব, আমেরিকা (america) যাব। লেখাপড়া যে অনেকদূর পর্যন্ত করেছি এমন নয়। তবে পেশারসুত্রে বিদেশ যেতে হয়। সেভাবেই লন্ডনেও (london) গেছি। দমদমের নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এমিরেটস-এর বিমানে দুবাই (dubai) হাব হয়ে প্রথমবার লন্ডন ভ্রমণ ২০১২ সালের মার্চে। তখন ওখানে বেশ ঠান্ডা। এর পরের বছরেও গিয়েছি। সেবার দমদম থেকে কাতার এয়ারলাইন্সের বিমানে। দোহা (doha) হয়ে লন্ডন।

এছাড়া দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালরু থেকে সরাসরি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের (British Airways) বিমানেও লন্ডন যাওয়া যায়।

দুবাই পৌঁছতে ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। ওখান থেকে লন্ডনের হিথরো (london heathrow) এয়ারপোর্ট আরও ৬ ঘন্টারও বেশী। এয়ারপোর্টে নেমে লাক্সারি বাসে রিডিনবার্গ। তারপর আমার প্রধান ডেরা কুইনটাউন রোড। রিডিনবার্গ থেকে বাসে এক ঘন্টা লাগে।

London

ওখান থেকে প্রথমেই গেলাম উইন্ডসর ক্যাসেল (windsor castle) দেখতে। বাসে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় লাগে। ট্রেনে ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছনো যায়। তবে ভাড়া বাসের থেকে বেশি। এছাড়া যাওয়া যায় ট্যাক্সিতেও। ভাড়া আরও অনেক বেশী। তখনই ভারতীয় টাকায় হাজার চারেক। সময় লাগে ৩৫ মিনিটের মত।

৯০০ বছরেরও বেশি বয়স এই ক্যাসেলের। বিশ্বের বৃহত্তম। এত বিশাল ক্যাসেল, আয়তনে যেন একটা ছোটখাট শহর। ১৮২০ সালে রাজা চতুর্থ জর্জ ক্যাসেলের যে অন্তঃপুর নির্মাণ করেন সেখানে অতিথিদের স্বাগত জানানো হত। নির্মাণের প্রায় ছেচল্লিশ বছর পর রাণী ভিক্টোরিয়া তা বন্ধ করে দেন। দেড়শ বছর বন্ধ থাকার পর রয়্যাল ট্রাস্ট সাধারণের জন্য ঐ অন্তঃপুর ফের খুলে দিয়েছে। তবে ক্যাসেলের ভেতরে রাণীর ‘ডল্স হাউস’ (dolls’ house) দেখে মন অনাবিল আনন্দে ভরে গেছে। পৃথিবীর বৃহত্তম ডল্স হাউস। রানী পুতুল খেলতেন। অজস্র পুতুল। কতকমের যে পুতুল তা বর্ণনা করতে গেলেও গোলকধাঁধার মধ্যে পড়েতে হবে।

লন্ডনে (london) মাত্র তিনদিন ছিলাম। প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি। এই শহর হেরিটেজগুলোকে গুরুত্ব দেয়। পুরনো ঐতিহ্যকে ব্রিটিশরা মাথায় করে রাখে। ইতিহাসকে সম্মান করে। পুরনো ঐতিহ্যকে মর্যাদা দেয়।

মেরিলিবোর্ণ ক্রিকেট ক্লাব(MCC at Lord’s)-র ভেতরে একটা দারুণ মিউজিয়াম আছে। সেদিন রবিবার ছিল অথবা অন্য কারণে ক্লাব বন্ধ ছিল। ঢুকতে পারিনি। এর উল্টো দিকটা হাইড পার্ক (hyde park)। তার কাছাকাছি দুনিয়া বিখ্যাত মাদাম তুসোর মিউজিয়াম (madame tussauds london)। এখানেই নামী দামী মানুষদের মোমের মূর্তি গড়া হয়। আমাদের সুনীল গাভাস্কার, সচিন তেন্ডুলকার, শাহরুখ, আমির, সালমান খানদের মূর্তিও বানানো হয়েছে। মাদাম তুসোর মিউজিয়াম ঘুরে দেখে মনে হয়েছে, অন্যদের ক্ষেত্রে যতটা নিখুঁত এশীয়দের ক্ষেত্রে ততটা নয়। পাশাপাশি বিটলসদের মূর্তি অবিকল হয়েছে। এই মতামত একান্তই আমার ব্যক্তিগত।

সবচেয়ে আশ্চর্য এবং মজার হল লন্ডনের (london) ট্যাক্সি। যেন এক একটা ভিনটেজ কার। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট (british parliament), বিগ বেন-এর (big ben) উল্টো দিকে সেই বিখ্যাত টেমস নদী (thames river)। টাইগার অফ লন্ডন বা লন্ডন ব্রিজও (london bridge) বলে। কেউ বেশি পয়সা খরচ করতে চাইলে স্বছন্দে ‘লন্ডন আই’-এ (london eye) চেপে দেখতে পারেন। অনেক উঁচু থেকে দেখা যায়।এবার পুরো শহর ঘোরার জন্য ‘হপ-অন হপ-অফ’ বাসে (Hop-on-hop-off bus/hoho bus) চেপে বসুন আর যেখানে যেতে চান সেখানে নেমে পড়ুন। পরের গাড়িতে আবার পছন্দের দর্শনীয় জায়গায় চলে যান।

london
london

এভাবেই পৌঁছে যান শার্লক হোমসের মানে আর্থার কোনান ডয়েলের ২২১, নম্বর বেকার স্ট্রিটের (baker street) বাড়িতে। এটা আর্থার কোনান ডয়েলের আসল বাড়ি নয়। মডেল বাড়ি। এখানে তাঁর লেখার টেবল, টুপি, বন্দুক, চেয়ার ইত্যাদি আছে।

লন্ডন (london) শহরের একটা আলাদা মাদকতা আছে। যা বোধহয় পৃথিবীর অন্য কোনও শহরে নেই। এই কারণে লন্ডন অন্যদের থেকে আলাদা। এই শহরটার পরতে পরতে জড়িয়ে আছে হেরিটেজ সংস্কৃতি। আপনি জুন মাসে এখানে এসে উইম্বলডন টেনিস যদি দেখতে আসেন তবে অবশ্যই দেখবেন ‘ফিশ আন্ড ‘চিপস’-এর (fish & chips) সমাহার। দর্শকরা এই স্পেশাল ডিশ উইম্বলডন দেখতে এসে খাবেন না ভাবতেই পারেন না।

ভারতে প্রথম মেট্রো ট্রেন যদি কলকাতায় শুরু হয়ে থাকে তবে দুনিয়ার প্রথম মেট্রো লন্ডনে (london metro)। অনেকগুলো লেয়ার আছে। একতলা থেকে তিনতলা। যা লন্ডনে গ্রিণ চ্যানেল, রেড চ্যানেল। ওদেশে অবশ্য ভূগর্ভ রেলকে টিউব রেল (london tube) বলা হয়।

তবে একদিনের জন্য গেলেও আপনি ঘুরতে ঘুরতে ট্রাফালগার স্কোয়ারে (trafalgar square) যদি যান তবে অনেক মানুষের সমাগম দেখতে পাবেন। জায়গায় জায়গায় দেখবেন ডেমো চলছে। যার সঙ্গে আমাদের ধর্মতলার মিল অনেকটাই। আর শীতের সময় লণ্ডনে ডাবল ডেকার বাসগুলো দেখতে বেশ লাগে। তবে রাতের লন্ডন বাস্তবিকই মায়াবী। লন্ডনে যাওয়ার সেরা সময় মে থেকে জুলাই মাস। ওই সময়টা ওখানে গ্রীষ্ম কাল। তাপমাত্রা ১৬ বা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে।

কয়েকদিন লন্ডনে মনের সুখে কাটিয়ে এবার বিদায় নেবার পালা। ওই শহরের মধ্যেই আছে গ্যাটউইক
আন্তজার্তিক বিমানবন্দর (gatwick international airport)। ছোট ছোট বিমান ছাড়ে। তবে খাবার দেয় না। ওখান থেকেই উঠে বসলাম বিমানে। এবার আমার স্পেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here