বুড়ির কথা খুব মনে পড়ে

0
231

স্কুলের গরমের ছুটিতে  মা বাবা ও আমি বর্ধমান জেলার কলানব গ্রামে ঘুরতে যাই। সেই গ্রামের একটা বিশেষ জায়গা শিক্ষানিকেতন। ১৯৩৫ সালে এটি তৈরি করেছিলেন এক দাদু ও দিদা। আমি বাবার মুখে শুনেছি, ওঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্যেও অনেক কাজ করেছিলেন। যাঁদের নাম বিজয় কুমার ভট্টাচার্য ও সাধনা ভট্টাচার্য। আমার মা’র কাছ থেকেও ওখানকার আর এক জ্যেঠুর কথাও শুনেছি – অনীশ জ্যেঠু। উনি বাবাকে খুব ভালোবাসতেন। ওখানে অনেক জ্যেঠু, জেঠিমা, দাদু, দিদা, দিদি একসঙ্গে থাকেন।

ওখানে অনেক কিছু দেখার আছে। যেমন অনেক বাচ্ছা আছে যাদের বাবা মা মাঠে কাজ করতে যায়, তারা এখানে এসে পড়াশোনা শেখে। মহিলাদের হাতের কাজ শেখানো হয়। বয়স্ক মানুষদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম আছে। সেখানে বিনা পয়সাতে চোখ দেখা হয়, চোখের অপারেশন করা হয়। 

আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে এক জ্যেঠু ছিলেন, যার বাডিতে  নানা ধরণের গাছপালা ছিলো। যার মধ্যে অনেক গাছই ওষুধ হিসেবে কাজ করে। যেমন কালমেঘ, বাসকপাতা, কুলেখাড়া, তুলসী, অ্যালোভেরা, নিম, গুলঞ্ছ। এছাড়াও অনেক ফল আর সবজি গাছ- যেমন বেগুন, গাজর, পেঁয়াজ, লাউ। এখানে মাশরুমের চাষ হয়। 

কেন জানিনা, আমার আবার মাশরুম খেতে খুব ভালো লাগে। অনেক গরু আছে, যারা দুধ দেয়। সেই দুধ গ্রামের মেয়েরা কিনে  নিয়ে যায়। আবার ধান চাষ হয়। আমারা আসার সময় ওখান থেকে চাল এনেছি। কলানব গ্রামের ছোটদের থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। তাদের বয়স ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে। এই বয়স থেকেই তারা নিজেদের খাবার থালা, ব্যাগ, বই, স্লেট, জুতো – সব কিছু গুছিয়ে রাখতে আর সব কিছু ভাগ করে নিতে জানে। 

আমরা কলকাতা থেকে যাবার সময় কিছু চকলেট নিয়ে গিয়েছিলুম। ওদের একজনের সঙ্গে অন্যজনের এত ভাল বন্ধুত্ব যে তারা দুটো চকলেট পেলে একটা পাশের বন্ধুকে দিয়ে দেয়।

এখানে বড় দিদি দাদারা একটা স্কুলে যায়, যে স্কুলে শান্তিনিকেতনের মতো মাঠে গাছের নিচে বসে পড়াশুনা হয়।

ওখানে অসহায় বয়স্ক দিদা, দাদুরা যাতে থাকতে পারেন তাই তাঁদের জন্য আছে বৃদ্ধাশ্রম। 

ওখানে বৃষ্টির জল বাঁচিয়ে সেই জল জমিয়ে রাখে। আমাদের আরও নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছিলো যে পশুর বোঝার ক্ষমতা আছে। সেখানে একটা কুকুর ছিলো তার নাম বুড়ি। ও খুব ভালো। সবার দেওয়া খাবার খায়। তরকারি, মাছ, ডাল, আলুভাজা, ভাত, রুটি। 

সবসময় ঘেউ ঘেউ করে ডাকে না, কুঁই কুঁই করে কি যেন বলে। আমার মা তাকে একদিন ঘুরতে যাবার সময় বলেছিলেন, “আসবার সময় বিস্কুট আনবো” বিকেলে আমরা যখন ফিরেছি ও এসে ঠিক আমার মায়ের পায়ের কাছে এসে বসলো আর কুঁই কুঁই করে যেন বলতে লাগলো – কই? আমার বিস্কূট দাও। মা বিস্কুট দিতে ও চুপ করলো।

ওখানে একটা মিউজিয়াম আছে যেখান থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম। যেমন, আমাদের দেশের হারানো চাল, যেমন, কালানুনিয়া, রাধুনীপাগল, কাটারিভোগ, বাধাভোগ, হরিণখুড়ি, দুধের স্বর, কলমা ধান। এ তো গেল চালের কথা। জানতে পারলাম অনেক অজানা পাথরের কথাও। যেগুলো আমাদের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন খনি থেকে সংগ্রহ করা হয়।

সবমিলিয়ে আমাদের ভ্রমণটি খুব ভালো ছিলো। ফিরে আসার সময় জানলা দিয়ে দেখছি দূরে রেলগাড়ি যাচ্ছে। আর বাড়ি ঘর, গাছপালা। খাল, বিল, পুকুর – সবকিছুই যেন ছুটছে। 

আমার বুড়ির কথা খুব মনে পড়ে। শঙ্করমামা বলেছে ওখানে যাবে। যদি যায়, বাবাকে বলেছি আমরাও আবার যাবো। আমি মনে করি, ওখানে সবার যাওয়া উচিত। আর দেখা উচি্‌ত, ওখানকার বাচ্চারা কতো ভালো আর কতো অল্প জিনিষ পেয়ে ওরা কতো কতো খুশী থাকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here