Rajabhatkhaoa: নরম রোদ গায়ে মেখে রাজাভাতখাওয়ায়

0
132

উত্তরবঙ্গর শিলিগুড়ির(siliguri) মত জায়গায় বড় হওয়ার ফলে পাহাড়, মেঘ, জঙ্গল এই সবকিছুই আমার কাছে ঘরবাড়ির মত সহজ হয়ে গিয়েছিল। স্কুলে পড়ার সময় একটা বাঁধা গন্ডি আর শাসনের ঘেরাটোপে থেকেছি।  একটু বড় হবার পর কখনও কয়েকজন বন্ধু, আবার কখনও একাই ঘোরার মজা একেবারে সুদে আসলে উসুল করে নিয়েছি। কিন্তু সমস্যা একটাই, দীর্ঘ ভ্রমণ কাহিনী লিখতে পারিনা। টুকরো টুকরো কিছু স্মৃতি ভাগ করে নিতে পারি|

রাজাভাতখাওয়া(rajabhatkhaoa) আমার খুব প্রিয় জায়গা। অথচ, প্রথমবার যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহই ছিল না। ঠিক ছিল, আলিপুরদুয়ারে যখন যাব তখন জয়ন্তীতে(jayanti) থাকব। সেখানে জায়গা পেলাম না, ঠাঁই হল রাজাভাতখাওয়ায়।  ইসস, জয়ন্তীতে থাকতে পেলাম না! মনটা বড় খচখচ করছিল। সেই আক্ষেপ নিয়েই বিকেলে ঘুরতে বেরোলাম। একেবারে পায়ে হেঁটেই।
কিন্তু জায়গাটার নাম রাজাভাতখাওয়া কেন? এর একটা ঐতিহাসিক শ্রুতি আছে। আগে জায়গাটা ভুটানের(bhutan) শাসনাধীণ ছিল। কোচবিহারের(coachbihar) রাজা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যতদিন এই জায়গা ভুটানের থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি ভাত খাবেন না। এই প্রতিজ্ঞার কথা বোধহয় ভুটান রাজের কানে গিয়েছিল। তিনি এরপরই ভুটান এই জায়গার অধিকার ছেড়ে দেন। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এখানকার রাজা ভুটানের রাজাকে ভাত খাওয়ার নিমন্ত্রণ করেন। ভুটানরাজ সেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করেছিলেন। তারপর থেকেই এই জায়গার নাম রাজাভাতখাওয়া নামে পরিচিত হয়।
প্রথমেই বলে রাখি, ওই প্রান্তিক স্টেশনটার কথা। যাঁরা গেছেন, তাঁরা জানেন। এখানে বসে থাকলেই মন জুড়িয়ে যায়। সারাদিন হাতে গোনা কয়েকটা ট্রেন যায়। ফলে, জঙ্গলে ঘেরা একেবারেই শান্ত একটা স্টেশন। এখানে কিন্তু ট্রেনের খবর মাইকে ঘোষনা হয় না। এখনও ঘন্টা বাজে। একটা অন্যরকমের ভাললাগা।
স্টেশনের গায়ে ছোট্ট একটা ভাতের হোটেল। একবার ঢুকে পড়ুন। দেখুন, আতিথেয়তা কাকে বলে। গরম গরম ভাত। কলাপাতার ওপর যেন একরাশ জুঁই ফুল। বোরোলি বা দেশী মুরগী। আহা যেন অমৃত। এর সঙ্গে উষ্ণ আন্তরিকতা। যার কোনও তুলনা নেই। মন ভাল করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
কোথায় থাকবেনঃ পায়ে হেঁটে একটু চক্কর কাটুন। ইংরেজ আমলের কাঠের বাংলো। ওখানেই আমরা উঠেছিলাম। পাশেই বন দপ্তরের সরকারী লজ। এখনও বাইরে থেকে নতুনের মত লাগে। ভেতরটা দারুণ সাজানো গোছানো। তবে কাঠের বাংলোর তুলনায় থাকার ভাড়াটা একটু বেশি। লাগোয়া ক্যান্টিন। সকলে ওখানেই খাওয়া দাওয়া সারেন। আমাদের কাঠের বাংলোতে কোনো খাওয়ার ব্যবস্থা নেই, তাই ওখানকার বোর্ডারদের কাছেও ওই ক্যান্টিন অগতির গতি। রাজাভাতখাওয়াতে(rajabhatkhoa) কিছু হোম স্টে’ও আছে। তবে সরকারী বাংলো অথবা লজই থাকার জন্য সবথেকে ভাল। কিছু কেনাকাটা করার দরকার হলে তারও ব্যাবস্থাও আছে। স্টেশনের একদিকে ছোট্ট একটা গ্রাম্য বাজার।
রেল ক্রসিং পেরিয়ে জঙ্গল ঘেরা রাস্তা ধরে একটু আলতো করে হেঁটে আসা এক দারুণ অনুভূতি। এখানে জন্তু জানোয়ারের তেমন ভয় নেই। অথচ, জঙ্গলের রোমাঞ্চ আছে পুরোমাত্রায়। বিশাল বিশাল প্রাচীন সব গাছ। যুতদূর খুশি হেঁটে যান। যেখানে গিয়ে মনে হবে, আর পারছেন না, বসে পড়ুন। ফেরার অটো ঠিক পেয়ে যাবেন। অলসভাবে হাঁটতে হাঁটতে কোনও চায়ের দোকানে বসে পড়ুন। চা, অমলেটের সঙ্গে মোমো বা ওয়াই ওয়াই দিব্যি খেয়ে নিতে পারেন। বড় দোকান বা রেস্তোরায় তো অনেক খেয়েছেন। জঙ্গলের ধারে ওই ছোট্ট গুমটি। বাইরে বাঁশের বেঞ্চ। সুন্দর বুনো হাওয়া। সেখানে অদ্ভূত একটা পরিবেশে সকাল বা বিকেলের টিফিনটা মন্দ নয়।
চেক পোস্ট থেকে একটা অটো নিয়ে ঘুরে আসুন। এক সাধুবাবার মন্দিরে। কাছেই, মিনিট পাঁচেক। সাধুবাবা সেখানে একাই থাকেন। হাতি আসে। চিতা বাঘ আসে। কোনও ভয়ডর নেই। তিনি দিব্যি আছেন। কাছেই ওয়াচ টাওয়ার। সেই ওয়াচ টাওয়ারে হাতি পিঠ ঘসে। সিঁড়ি ধরে উঠে যান। একনজরে দেখে নিন জঙ্গলের চারপাশটা। চাইলে সাধুবাবার সঙ্গে একটু গল্পও করতে পারেন। খুব রসিক মানুষ। পুরনো দিনের কত কথা। হাতিদের কথা শুনতে পারেন। দেখতে একেবারে শীর্ণকায়। শেষ কবে ভাত খেয়েছেন, নিজেও জানেন না। আশেপাশের সবাই তাঁকে খুব ভক্তি করে, একটু দাঁড়াতেই বোঝা যায়। কত লোক দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। প্রণাম করে যাচ্ছে। ফলমূল দিয়ে যাচ্ছে।
জঙ্গলের মাঝে ওই সাধুবাবার আশ্রম যেন অন্য এক তৃপ্তি দিয়ে যায়। এত হাতির আনাগোনা। সাধুবাবা কী নিস্পৃহ। দাঁড়াতে বললে দাঁড়ায়। সাধুবাবা দু’একটা ফল দেয়। তারপর পালাতে বললে পালায়। তবে আপনিও জঙ্গলে হাতির পিঠে চড়ে ঘুরতে পারেন। মাথা পিছু দক্ষিণা ৬০০টাকা। এছাড়া জঙ্গল সাফারি করতে চাইলে মাথা পিছু খরচ ১৬০০টাকা। যেদিন সাফারিতে যেতে চান তার অন্ততঃ একদিন আগে জানাতে হবে।
সন্ধ্যে নামছে। সেই জঙ্গলের রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছি। গুনগুন করে গান গাইতে ইচ্ছা করছে। সব মিলিয়ে দারুণ এক অভিজ্ঞতা। দু’দিনের জন্য এসেছি। পরদিন খুব ভোরে উঠে, সাড়ে পাঁচটায় সানরাইজ দেখে আবার সেই একই রাস্তায়। জঙ্গলের বুকে আস্তে আস্তে সকাল হচ্ছে। গাছের ফাঁক দিয়ে আলো এসে পড়েছে। সবমিলিয়ে দারুণ এক অনুভূতি। এই লকডাউনের সময় সেই স্মৃতিগুলো বারবার ফিরে আসছে।
কীভাবে যাবেনঃ কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি(siliguri) হয়ে গেলে শিয়ালদহ থেকে এনজেপি গামী যে কোনও ট্রেনে।  নামুন এনজেপি স্টেশনে। এরপর ওখান থেকে শিলিগুড়ি-হাসিমারা(hashimara) সেকশনের ট্রেন ধরে রাজাভাতখাওয়া স্টেশনে নামুন। অথবা, দুপুর ১-৩৫ মিনিটে তিস্তা তোর্সা বা রাত সাড়ে সাতটায় উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসেও। শিয়ালদহ থেকে উঠে নামুন আলিপুরদুয়ারে(alipurduar)। ওখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে রাজাভাতখাওয়া।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here