উত্তর বঙ্গের পাহাড়ের প্রতি বাঙালি একটু বেশই আবেগ প্রবণ সেই দলের আমিও একজন সদস্য। প্রতি
বছর একবার ওদিকে যাবোই যাবো। আমার ১১ বছরের মেয়ে মাঝে মধ্যে বলে ওঠে…”আবার NJP STATION…”।
আমার এই বেড়ানো ও পাখির ছবি তোলার ব্যাপারে যে মানুষটি সব থেকে বেশি উৎসাহ দেন তিনি হলেন অরূপ গুহ নিয়োগী, আমার কলেজের অধ্যাপক এবং আমার প্রতিবেশী। আমাদের দুজনের গল্পের বেশিরভাগ বিষয়ই হলো পুরানো বেড়ানোর অভিজ্ঞতা, বা আগামী দু এক মাসের মধ্যে কোথায় বেড়াতে যাওয়া যায়। সেইরকমই এক আলোচনাতে ঠিক হয় ডিসেম্বর মাসে কোনো এক ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামে নিভৃতে কয়েকটি দিন কাটাবো আর পাখির ছবি তুলব। কিন্তু প্রশ্ন হলো যাবো কোথায়? কারণ যে সময় আমরা যাবো বলে মনস্থির করেছি হোটেলে বুকিং পাবোনা ধরেই এগোতে শুরু করি।
![Gitkolbong birds](https://www.asbongstravel.com/wp-content/uploads/2020/06/2020-06-06-12-42-14-768x678.jpg)
বিভিন্ন ফেসবুক গ্রূপের দৌলতে অনেক মানুষের সাথে যোগাযোগ তৈরি হয়েছে, যারা অনেকেই আমার মতো বেড়াতে ভালোবাসেন আবার অনেকে পাখির ছবি তুলতেও ভালোবাসেন। ইন্টারনেটে আলাপ হল সুমন খালিঙের সঙ্গে। আলাপচারিতায় উনি বলেছিলেন ওনার নিজের একটি ছোট হোম স্টে আছে লাভার কাছাকাছি কোনো এক জায়গায়। যেমন ভাবা তেমন কাজ, সঙ্গে সঙ্গে ওনার সাথে যোগাযোগ করা হলো এবং উনি জানালেন আমরা যেই সময় যাবো সেইসময় ওনার থাকার জায়গাও খালি আছে। আমরাও ঠিক করে ফেললাম এবারের গন্তব্য গিট কোলবং (gitkolbong), সৌজন্যে সুমন খালিঙ।
![Rolling hills of Gitkolbong](https://www.asbongstravel.com/wp-content/uploads/2020/06/FB_IMG_1591374601235-768x576.jpg)
![Gitkolbong birds](https://www.asbongstravel.com/wp-content/uploads/2020/06/FB_IMG_1591374300153-1-768x642.jpg)
লাভা থেকে আলগারা হয়ে কালিপঙ যাবার রাস্তায় কিছুদূর এগোলে বাহাতে একটি কাঁচা রাস্তা নেমে যাচ্ছে
নিচের দিকে , সেই পথ ধরে কিছুদূর এগোলেই ওনার বাড়ি বা বলতে পারেন আমাদের এবারের গন্তব্য (gitkolbong)। লাভা থেকে দূরত্ব প্রায় ১০ কিমি কিন্তু রাস্তা খারাপ থাকার জন্য আমাদের সময় লাগলো প্রায় ১ ঘন্টা। পুরোটাই জঙ্গলে ঘেরা ওনাদের গ্রাম, জনসংখ্যা ৫০০ এর মত। ওনার বাড়িটি খুব সুন্দর, কয়েক একর এলাচ ক্ষেতের মধ্যে। বাড়িটিতে পৌঁছাতে রাস্তা থেকে একটু উপরে হেটে উঠতে হয়। চারিদিকে নানান পাহাড়ি ফুল ও অর্কিড দিয়ে সাজানো ছোট্ট একটি লন ও আছে। একমাত্র অসুবিধা হল বাথরুমটি ঘরের থেকে দু-পা বাইরে।
![Gitkolbong birds](https://www.asbongstravel.com/wp-content/uploads/2020/06/2020-06-04-23-40-57-1-768x510.jpg)
ওনার স্ত্রী চাকরি করেন শিলিগুড়ি তে, মা অসুস্থ আর বাবা ব্যস্ত থাকেন চাষবাস নিয়ে তাই অতিথি আপ্যায়নের
পুরো দায়িত্বে উনি। রান্না থেকে ঘর পরিষ্কার আবার গাইড হয়ে পাখির ছবি তুলেত সাহায্য করা সবটাই উনি
নিজেই করেন। তাই মাঝে মধ্যে সামলাতে না পারেলও হাসিমুখে তা ম্যানেজও করতেন।
![Gitkolbong birds](https://www.asbongstravel.com/wp-content/uploads/2020/06/2020-06-06-13-04-59-768x563.jpg)
এইবার আসি জায়গাটি সম্বন্ধে, পাহাড়ি গ্রাম যেমন সুন্দর হওয়া উচিত এটিও ঠিক তেমনই অপরূপ সুন্দর। যেহেতু ওনার বাড়ি পাহাড়ের পূর্ব ঢালে তাই বাড়ি থেকে সরাসরি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় না। একটু হেটে উপরে উঠলে একটি ভিউ পয়েন্ট আছে সেখান থেকে পুরো কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জটি দেখা যায়। এই জায়গাটিতে কত পাখি পাবো বা কি ধরনের পাবো সেই সম্বন্ধে আমাদের কোনো ধারণা ছিলোনা। শুধু এইটুকু বিশ্বাস ছিল লাভা কোলাখাম অঞ্চলে বেশ কিছু বিরল পাখির দেখা মেলে এবং জঙ্গলটিও বন্য প্রাণে পরিপূর্ণ। সেই আশা ভরসা নিয়েই প্রতিদিন সকালে আমরাও বেরিয়ে পড়তাম জঙ্গলের বিভিন্ন দিকে, সঙ্গে সুমনজি।
![Rolling hills of Gitkolbong](https://www.asbongstravel.com/wp-content/uploads/2020/06/FB_IMG_1591374843309-768x576.jpg)
অনেক পাখির ছবি আমরা পেয়েছি আবার অনেক পাখি দেখতে পেলেও ভালো ছবি তুলতে পারিনি। রোজ
জঙ্গলে হাঁটার সময় বার্কিং ডিয়ার এর গলার আওয়াজ পেতাম কিন্তু দেখতে পেতাম না। শেষদিন অপ্রত্যাশিত
ভাবে আমাদের একদম মুখোমুখি একজোড়া এসে হাজির। দু পক্ষই একে অপরকে এত কাছে দেখে হকচকিয়ে যাই। নিজেকে গুছিয়ে ক্যামেরা তুলতে তুলতে তিনি জঙ্গলে বিলীন হয়ে যান, সেই দুঃখ এখনো কাটেনি আমার।
![Gitkolbong birds](https://www.asbongstravel.com/wp-content/uploads/2020/06/2020-06-04-18-48-35-768x528.jpg)
![Gitkolbong birds](https://www.asbongstravel.com/wp-content/uploads/2020/06/2020-06-04-18-54-49-768x494.jpg)
![Gitkolbong birds](https://www.asbongstravel.com/wp-content/uploads/2020/06/2020-06-04-18-51-35-768x416.jpg)
প্রতিদিন প্রায় ১০কিমি করে হাটা হতো আমাদের। ক্লান্ত শরীরে পড়ন্ত বিকেলে চা পাকোড়া সহযোগে গল্প করে ছবি দেখে কাটিয়ে দিতাম আমরা। ওখানে একটি অপূর্ব সুন্দর বৌদ্ধ মনেস্ট্রি রয়েছে শেরপাদের আর যারা এদিক ওদিক ঘুরতে ভালোবাসেন তারা লাভা (lava), কোলাখাম (kolakham), নেওড়াভ্যালি ফরেস্ট (neora valley forest), আলগারা (algara) গাড়ি নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন। আর যারা অলস সময় কাটাতে চান তারা শুধু পায়ে হেঁটে উপভোগ করুন গিট কোলবং (gitkolbong) কে।
![Gitkolbong birds](https://www.asbongstravel.com/wp-content/uploads/2020/06/FB_IMG_1591374381765-768x661.jpg)
আমার আশা, যারা অজানা অচেনা জায়গায় ঘুরতে ভালোবাসেন তারা খুবই উপভোগ করবেন এই
জায়গায়টি। পাখির ছবি তুলতে যারা বিভিন্ন জায়গায় যান তাদের জন্য রইল নতুন পথের হদিস। কয়েকটি ছবি ও সুমনজির ফোন নাম্বার দিলাম পাঠকের জন্য। ভালো লাগবে, ঘুরে অসুন না একবার অচেনা পাহাড়ি পথে।
যোগাযোগ: সুমন খালিঙ +91 80019 86999
যোগাযোগের জন্য সুমন খালিঙ্গের ফেসবুক একাউন্ট: এখানে ক্লিক করুন
![Gitkolbong birds](https://www.asbongstravel.com/wp-content/uploads/2020/06/IMG-20200605-WA0012-768x512.jpg)