Mussoorie: Queen of the Hills

0
106
Mussoorie

মুসৌরী (Mussoorie) যাবার ইচ্ছা ছিল অনেক দিনের। কিন্তু যা হয়, যাব বললেই তো আর যাওয়া যায় না। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ‘সময় না এলে কিছুই হয় না’। একদিনসেই সময় এল। মুসৌরী (Mussoorie) ভ্রমণের সুপ্ত বাসনা অনেকদিন পরে পূর্ণ হলেও, আমি কিন্তু মানস ভ্রমণ তার আগেই করে ফেলেছি। যেমন, কী ভাবে, কোন পথে যাব? আমার সাধ্যর মধ্যে হোটেলে উত্তর-পূর্বমুখী ঘর আর সঙ্গে ব্যালকনি হবে তো? কন মাসে গেলে ভাল হয়। এছাড়াও রিসার্চ ওয়ার্ক করে ঠিক করেনিয়েছিলাম, অযথা না ঘুরে যা না দেখলেই নয়, শুধু সেখানেই যাব। আর বাকি সময়টা নিজের মত করে উপভোগ করব।

অনেকেই গ্রীষ্মে মুসৌরী (Mussoorie) যায়। কারণ, জুন-অক্টোবর মরশুম। কিন্তু আমি বাছলাম নভেম্বরকে। যাঁরা একাধিকবার মুসৌরী ভ্রমণ করেছেন, সেরকম কয়েকজনেরসঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাঁরা বললেন, ঠান্ডা সহ্য করতে পারলে নভেম্বরের থেকে ভাল সময় আর কিছু হতে পারে না। কথাটা যে কতটা ঠিক তা মুসৌরীতে (Mussoorie) গিয়ে টের পেয়েছি। সে কথায় পরে আসব।

হাওড়া থেকে হরিদ্বার জংশন যাওয়ার তিনটি ট্রেন আছে। কুম্ভ এক্সপ্রেস, উপাসনা এক্সপ্রেস এবং দুন এক্সপ্রেসেও যাওয়া যায়। আমরা গেছি কুম্ভ এক্সপ্রেসে। দুপুর ১ টায় ট্রেন ছেড়ে পরদিন বিকেল ৪-১৫ নাগাদ হরিদ্বার পৌঁছলাম, সঙ্গে আমার স্ত্রী রঞ্জনা। সবাই হরিদ্বারকে (Haridwar) ঘাঁটি করে হৃষিকেষ ও মুসৌরী (Mussoorie) ভ্রমণ করেন।হরিদ্বার থেকে বাসে বা ট্রেনে দেরাদুন (Dehradun)। 

দেরাদুন থেকে বাসে হৃষিকেষ (Hrishikesh) বা মুসৌরী যেতে পারেন। আবার ইচ্ছা করলে বাসে একদিনের প্যাকেজ ট্যুরে সব কিছু দেখেনিতে পারেন। অনেকে হরিদ্বার থেকে একই দিনে কয়েক ঘন্টার প্যাকেজ ট্যুর সেরে নেন। আমরা ও পথে হাঁটতে চাইনি। তাতে আমাদের মন ভরবে না। তাই আমরা তিন জায়গার জন্য তিনদিন করে বরাদ্দ করেছিলাম। সেইমত আমরা হরিদ্বার ও হৃষিকেষ ঘুরেছি। সে গল্প অন্য কোনও সময় না হয় বলব। এখন শুধু মুসৌরী (Mussoorie)

হরিদ্বার (Haridwar) থেকে একটা গাড়ি নিয়ে আগাম বুক করা ক্লক টাওয়ারের কাছে নিউ ক্যাসেল হোটেলে গিয়ে উঠলাম। মুসৌরীকে ‘কুইন অফ হিল’ বলা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭,৪৬৪ ফুট ওপরে লাল টিব্বা (Lal Tibba) ওখানকার সর্বোচ্চ পিক। বিখ্যাত ভিউ পয়েন্ট। আমার পায়ের ব্যাথার জন্য যাওয়া হয়নি। যাওয়া বেশ কঠিনও, সবাই যেতে পারে না। লাল টিব্বায় আগে সেনাদের ডিপো ছিল, তাই ডিপো হিলও বলা হয়। লাল টিব্বা থেকে মুসৌরীকে (Mussoorie) ছবির মত দেখতে পাবেন। ১৯৬৭ সালে ওখানকার পুরসভা একটা বিশালকায় জাপানী টেলিস্কোপ বসায়।

আকাশ পরিষ্কার থাকলে ঐ টেলিস্কোপের সাহায্যে আপনি কেদারনাথ, বদ্রিনাথ ও অমরনাথ মন্দির (Kedarnath, Badrinath, Amarnath Temples) দেখতে পাবেন। উপভোগ করতে পারবেন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। আমরা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬,৬৪০ ফুট উচ্চতার ভিউ পয়েন্ট-গান হিলে গেছি। ওখানে হেঁটে এবং রোপওয়েতেও যাওয়া যায়। আমরা মল রোড় থেকে রোপওয়েতে গান হিল পয়েন্টে গেলাম। সেদিন আকাশে কোনও কুয়াশা ছিল না। ওখান থেকে বদ্রীনাথ মন্দির দেখলাম। গান হিল পয়েন্টে তিব্বতি সেনাদের সঙ্গে ব্রিটিশ সেনাদের যুদ্ধ হয়েছিল। একটা পরিত্যক্ত কামান। যুদ্ধের স্মৃতি, যত্নের সঙ্গে ঘিরে রাখা হয়েছে। আমি আবার সেই কামানটা ছুঁয়ে দেখলাম। ভাল লাগল। গান হিল পয়েন্টে একটা বিরাট ছাদের মত আছে। সেখানে অনেক দোকানপাট। ভাল ভাল খাবারের দোকান। ইচ্ছা করলে কেনাকাটা করে খাওয়া দাওয়াও সেরে নিতে পারেন।

আমাদের হোটেলটা খুব উপরে। তবে হোটেলের ব্যালকনি থেকে রাতের দৃশ্য এককথায় নয়নাভিরাম। হোটেল থেকে খাড়াই রাস্তা ধরে হেঁটে ৫-৭ মিনিট নিচে নামলেই মল রোড। মল রোড দার্জিলিঙের ম্যাল কে মনে পড়ায়। তবে ম্যাল আকৃতিতে চৌকো, মল লম্বা। একান্তে সময় কাটাবার এক আদর্শ জায়গা। ইচ্ছাহলে কফি শপে ঢুকে পড়ুন। কফির পেয়ালায় চুমুক দিন কিংবা আইসক্রিমে কামড় দিন, আর দেখুন একদিকে খাদ, আর এক দিকে পাহাড়। ভাবুন ভাবুন। ভাবতে ভাবতেই কল্পনার জগতে উড়ে চলুন।

মল রোডের পাশেও কয়েকটা জায়গা আছে, যা আপনাকে মুগ্ধ করবে। ওখানে ইচ্ছা করলে স্কেটিং করতে পারেন, ভিডিও গেম খেলতে চান? তারও ব্যবস্থা আছে। মল রোডে পাবেন পেশাদার ছবিওয়ালা। ছবি তুলুন। কাছেই তিব্বতি বাজার (Tibetan Market)। কেনাকাটা করত পারেন। এরপর ফিরে আসুন, আর দু’ঘন্টার মধ্যে নিজের ছবি ডেলিভারি নিন। মল রোড ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করে না। তবে হোটেলে যেতে অনেকটা পথ। একটু তাড়াতাড়ি উঠেসাড়ে ছটা-সাতটার মধ্যে ফিরে ব্যালকনিতে বসে রাতের মুসৌরীকে (Mussoorie) নয়নভরে উপভোগ করতাম। মনটা যেন শান্তির সাগরে ডুব দিত। হোটেল ভাড়া তিনদিনের জন্য মাত্র পাঁচ হাজার। মুসৌরিতে (Mussoorie) হাজার টাকার মধ্যেই আপনি বেশ ভাল হোটেল পাবেন। এভাবেই কেটে গেল একটা দিন।

পরের দিন আমরা কোম্পানি গার্ডেন গেলাম। আপনি সরাসরি মল রোড থেকে হেঁটেও যেতে পারেন। কিন্তু আমরা হোটেল থেকে প্রথমে হেঁটে মল রোডে গেলাম।তারপর ৩০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে কোম্পানি গার্ডেন। অনেকটা আমদের নিক্কো পার্কের মত। ওখানে ক্যামেল ব্যাক রোডটা দারুণ। রাস্তার গঠন উটের মত। উটের শরীরটা যেমন সমান্তরাল থেকে বেঁকে গিয়ে মাথাটা উপরের দিকে উঠে গেছে, অনেকটাই তেমন। ওখানে দেখতে পাবেন হিমালয়ের সবচেয়ে পুরনো গির্জা। ক্যামেল ব্যাক রোডটা অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেক বেশি ঠান্ডা। এখানে অনেক গাছ আছে। অনেক হোটেল ও মোটেল। কোম্পানি গার্ডেনে অসংখ্য ফলস দেখতে পাবেন। প্রকৃতি নয়, সবই মানুষের তৈরি।

কেম্পটি ফলস, ভাট্টা ফলস, মোসি ফলস ছাড়াও আরও অনেক ফলস। সবগুলো দেখা হয়নি। কেম্পটি ফলস থেকে ১ মিনিট হেঁটে গেলে যে ছোট লেকটা দেখবেন, সেই মিস্ট ফলস কেম্পটি নদীর উপর। ওখানে বোটিঙের ব্যাবস্থা আছে। সবমিলিয়ে বিনোদনের অঢেল আয়োজন। এভাবেই সকাল থেকে ঘুরে ক্লান্ত হয়েছিলাম, খিদেও পেয়েছিল। কোম্পানি গার্ডেনে একটা রেস্তোরাঁতে দুপুরের খাওয়া সারলাম। বেশ ভাল চাইনিজ খাবার। কন্টিনেন্টালও পাবেন। এরপর কয়েকটা টুকিটাকি কেনাকাটা সেরে হোটেলে ফিরে এলাম। আমাদের মুসৌরী (Mussoorie) দর্শন শেষ। এবার ফেরার পালা।কিন্তু যাবার আগে দেবপ্রয়াগ-এর  (Devprayag) কথা না বলে পারছি না।

আমরা গেছি। হৃষিকেষ হয়ে যেতে হয়। অনেকেই হরিদ্বার ও তার আশপাস ঘোরেন। অথচ, কত কাছে। হরিদ্বার থেকে ২৪ কিমি হৃষিকেষ, এরপর আরও ৭৪কিমি। তবে হৃষিকেষ ছোট স্টেশন। দ্রুতগামী ট্রেন চলে না। এছাড়া আপনি ৫৮নং জাতীয় সড়ক হয়েও যেতে পারেন। 

উত্তরাখন্ডের (Uttarakhand) দেবপ্রয়াগ পঞ্চ প্রয়াগের একপ্রয়াগ। যেখানে ভয়ঙ্কর উত্তাল ভাগীরথী ও শান্ত অলকানন্দ, অদৃশ্য সরস্বতী নদীর মিলনে গঙ্গার উৎপত্তি। বাকি চার প্রয়াগ রুদ্র, কর্ণ, নন্দ, বিষ্ণু। 

দেবপ্রয়াগে অসংখ্য মন্দির। রঘুনাথ মন্দিরে পুজো দেন অনেকেই। সকলেই আগে থেকে তৈরি হয়েই যান। আমার গিন্নির অবশ্য পুজো দেবার কথা ছিল না। তিনিও  নদীতে স্নান সেরে পুজো দিলেন। অনেকে কলা গাছের ভেলা ভাসাচ্ছে। দুই বিদেশীনিকে দেখলাম, হাঁটু জলে গিয়ে ভক্তি ভরে ভেলা ভাসালেন। কাছাকাছিরমধ্যে অনেকে মাতা ভুবনেশ্বরী মন্দিরে পুজো দেন। পাশের গ্রামে ধনেশ্বরী মহাদেব মন্দিরেও অনেকে যান। কেউ কেউ শাপের দেবতা ডান্ডা নাগররাজা মন্দিরদর্শন করেন। 

তবে আমরা সব মন্দিরে না গিয়ে শুধু দেবপ্রয়াগে প্রায় ৬ ঘন্টা ছিলাম। এককথায়- বেশ ভাল লেগেছে। পারলে আপনিও ঘুরে আসুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here