বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো এক ফার্ম হাউস সামনে বিস্তৃত পাহাড়ের সারি। সন্ধেবেলায় ধরা দেয় আরও মোহময়ী চেহারায়।
পাহাড়ে বর্ষা বড় অদ্ভূত। বড় রহস্যময়। এই রোদ ঝলমলে। একটু পরেই ঝমঝম করে বৃষ্টি নেমে যেতে পারে। এই ভেবে ঘরের মধ্যে বন্দী থেকেছি, কোথাও বেরোইনি, দেখা গেল বৃষ্টিই হল না। শুধু শুধু হোটেল বন্দী হয়ে দিনটা নষ্ট। বর্ষায় অনেকেই এড়িয়ে চলতে চান পাহাড়কে। কিন্তু পাহাড়ে বৃষ্টি দেখার আলাদা একটা রোমাঞ্চ আছে। কোথাও ঘোরার দরকার নেই। শুধু ছাদ বা ব্যালকনিতে বসে যদি বৃষ্টি দেখা যায়, তাহলে কেমন হয়। তাহলে এমন একটা জায়গার হদিস দেওয়া যাক। বড়া মাঙ্গোয়া ! পর্যটন মানচিত্রে খুব একটা পরিচিত জায়গা নয়। কেউ কেউ হয়ত নাম শুনেছেন। অনেকের হয়ত ভালও লাগেনি। ফলে ফিরে এসে অন্যকে যেতে উৎসাহিত করেননি। আমার কিন্তু জায়গাটা ভালই লেগেছিল। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে যেখানে এসেছিলাম সেই বাড়িটা।
এটাকে ঠিক হোটেল বলা যাবে না। আবার হোম স্টেও বলা যাবে না। কর্পোরেট ব্যাপার যেমন নেই, তেমনি গ্রাম্য ব্যাপারও নেই। বরং, একে ফার্ম হাউস বলতে পারেন। একান্ত অবসরে দুটো দিন কাটানোর দারুণ একটা জায়গা। দু’খানা ঘর। জানলা থেকেই ধরা দেবে প্রকৃতি। সামনেই খোলা বারান্দা। সেখানে চেয়ার নিয়ে বসে পড়ুন। সকাল হোক বা দুপুর, বিকেল হোক বা রাত, সবসময়ই যেন অসাধারণ অনুভূতি। সামনে শুধু পাহাড়ের সারি। নান না জানা সব জনপদ। সন্ধে নেমে আসে। আর শহরের সব ক্লান্তি, সব অবসাদ যেন দূর হয়ে যায়। মনে হবে, একেবারেই অন্য এক জগতে চলে এসেছেন। অচেনা সেই জনপদে একটু একটু করে জ্বলে উঠবে আলো। মনে হবে, আপনার পায়ের তলায় যেন হাজার হাজার তারা নেমে এসেছে।
খুব যত্ন নিয়ে সাজান হয়েছে এই ফার্ম হাউসটাকে। একটু উপরে উঠে খাওয়ার জায়গা। সামনে সেই দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের সারি। এই সময় খুব খিদে পায়। তাই দু’দিনের জন্য ডায়টেসিয়ানের সব নিষেধাজ্ঞা ভুলে যান। কারণ, এখানকার খাবার এতটাই সুস্বাদু যে নিজেকে বঞ্চিত রাখার কোনও মানেই হয় না। চাইলে খাওয়া দাওয়ার আগে বা পরে আশপাশটা ঘুরে দেখতেই পারেন।
কিন্তু এই বর্ষার ভরসা কোথায়? বৃষ্টি নামতেই পারে। নামলে নামুক। ওই বারান্দায় বসে কোনও পছন্দের
বইয়ে মন দিতে পারেন। বইয়ে খুব এলার্জি? তাহলে মোবাইলেই চোখ রাখুন। পছন্দের গান চালিয়ে দিন। জায়গাটা এতটাই সুন্দর, অন্য কোথাও যেতে ইচ্ছেও করবে না।
কীভাবে যাবেন? কালিম্পং যাওয়ার পথেই পড়বে। তিস্তাবাজার পেরিয়ে আরও মিনিট পনেরো। শিলিগুড়ি থেকে মোটামুটি ঘন্টা দুই। বেশি দেরি না করে বর্ষার আগেই বেরিয়ে পড়ুন। আগাম বুকিং করতে চাইলে ৯৪৩৪৮ ৭২৫২০ নম্বরে একটু কথা বলে নিতে পারেন।