সাগর কন্যা কুয়াকাটা

0
214
বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে একটি অতি পরিচিত নাম৷ কুয়াকাটা (Kuakata) বাংলাদেশর দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি  দর্শনীয় স্থান। এটিও ইতোমধ্যেই যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেছ৷ স্বচ্ছ নীল আকাশ, বঙ্গোপসাগরের পানির ধাবমান ঢেউ এবং চিরসবুজ বনের এক অপূর্ব মিলন-মেলা এই কুয়াকাটাকে পর্যটকদের কাছে  প্রিয় করে তুলেছে। আরেকটি কারণে হাজার  হাজার  পর্যটক এখানে এসে  ভিড় করেন। তা হলো এটি পৃথিবীর এমন  একটি  জায়গা যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উভয়ই  দেখা যায়।  অবস্থান- পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার  মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নে, কুয়াকাটা অবস্থিত। কুয়াকাটার সৈকতের দৈর্ঘ্য ১৮ কিমি। ঢাকা ও বরিশাল থেকে এর দূরত্ব যথাক্রমে ৩৮০ ও ১০৮ কিলোমিটার। 

কুয়াকাটার (Kuakata) নামকরণ- কুয়াকাটা (Kuakata)  নামকরণের পেছনে এক মজার ইতিহাস আছে। প্রচলিত আছে খাবার পানি সংগ্রহ করার জন্য রাখাইন সম্প্রদায়ের বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা সমুদ্র সৈকতে  খননকৃত কুয়ার (কূপ) গল্প থেকে কুয়াকাটা (Kuakata) নামটি সৃষ্টি হয়েছে। মোঘলদের দ্বারা আরাকান বা বর্তমান মায়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে রাখাইনরা কুয়াকাটার উপকূলে আশ্রয় নিয়েছিল।  রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের রাজা মং এর নেতৃত্বে সাগর পাড়ি দিয়ে প্রথমে চট্টগ্রাম এবং পরে পটুয়াখালীর এ জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায় তাদের বসতি স্থাপন করে।তৎকালীন সরকার ওই সময় তাদের প্রত্যেককে ৩ একর এবং তাদের নিজস্ব পল্লী স্থাপনের জন্য ১২ একর করে সম্পত্তি প্রদান করেন।তাদের পল্লীটি আজও টিকে আছে। 

কুয়াকাটার সৈকতটি ক্রমশ: ঢালুভাবে উপসাগরে মিশে গেছে৷ এখানে স্নান ও সাঁতার কাটা দুটোই আনন্দদায়ক।সৈকতের পূর্বের গঙ্গামতির বাঁক থেকে সবচেয়ে ভাল সূর্যোদয় দেখতে পাবেন। আবার কুয়াকাটার (Kuakata) পশ্চিম সৈকতে আসলেই উপভোগ করতে পারবেন অপূর্ব সূর্যাস্ত।  এছাড়া কুয়াকাটায় (Kuakata) দেখা মিলবে শীতকালীন অতিথি পাখিদের।পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এখানে অনেকেই পিকনিকও করেন। আবার অনেকে জাহাজ, ট্রলার বা স্পীড বোটে করে গভীর সমুদ্রে গিয়ে খানিকটা সময় কাটিয়ে আসেন৷ ফাতরার চর, হাসার চর,সনার চর, কটকা, গঙ্গামতির লেক, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য স্থান। হাতে সময় থাকলে রাখাইন আদিবাসীদের পল্লী কেরানিপাড়া ঘুরতে যেতে পারেন।রাখাইন সম্প্রদায়ের নিজস্ব সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে এই পল্লী গড়ে উঠেছে।তাদের জীবনধারা একেবারেই অন্যরকম। প্রত্যেক বছর ভক্তরা রাস পূর্ণিমা ও মাঘী পূর্ণিমা উৎসবে যোগ দিতে আসেন।আরও দেখার মত দুটি জায়গার নাম মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ বিহার ও সীমা বৌদ্ধ বিহার। 

লেম্বুপাড়ায় গেলে দেখতে পাবেন একেবারে ভিন্ন চিত্র। এখানে আশ্বিন থেকে চৈত্র মাসে জেলেরা প্রাকৃতিক উপায়ে শুটকি সংরক্ষণ এর জন্য মাছ শুকান৷ তারপর সেই শুটকি মাছ সারা দেশে সরবরাহ করেন ও বিদেশেও রপ্তানি করেন৷ দেখতে পাবেন কিভাবে জেলেরা বিভিন্ন মাছ যেমন ইলিশ, রূপচাঁদা, ইত্যাদি রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তেরি করছে। আলীপুর বন্দর হল দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় মৎস্য ব্যবসা কেন্দ্র যেটি কুয়াকাটা থেকে প্রায় চার কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

কিভাবে যাবেন? ঢাকার সায়েদাবাদ এবং গাবতলি বাস স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি দ্রুতি পরিবহন ও সাকুরা পরিবহণের বাসে ভ্রমণ করতে পারেন।বাসের ভাড়া ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। ঢাকা থেকে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগবে আনুমানিক ১২ ঘণ্টা। বাস আপনাকে কুয়াকাটা (Kuakata) থেকে ২০০ মিটার দূরে নামিয়ে দিবে। আপনি বাসে যেতে না চাইলে লঞ্চেও কুয়াকাটা যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনি ঢাকার সদরঘাট নৌ-টার্মিনাল থেকে পটুয়াখালী পর্যন্ত লঞ্চে যেতে পারবেন।লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিন এর ভাড়া ১০০০ টাকা ও ডাবল কেবিন এর ভাড়া ১৮০০ টাকা। মনে রাখতে হবে সব লঞ্চ এই রুটে বিকাল ৫ টা থেকে ৭ টার মধ্যে ছেড়ে যায়। কুয়াকাটা (Kuakata) যাওয়ার আগে আপনার ধারণা থাকতে পারে এই অপূর্ব সমুদ্র সৈকতটি আর সকল সমুদ্র সৈকতের মতোই হবে। কিন্তু কুয়াকাটা অনন্য। শুধু সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের জন্যই নয় বরং এখানের নিরিবিলি পরিবেশের  মাঝে আপনি হারিয়ে যেতে পারেন নিমিষেই। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here