রাতের খাবার খেতে খেতে দাদাজান কে বললাম আমাকে আজ গল্প না শুনালে আমি কিন্তু ঘুমাচ্ছি না। কথা শুনে সবাই এক দফা হেসে নিল। অনার্স ২য় বর্ষে পড়া মেয়ে আবদার করছে তাকে গল্প শুনিয়ে ঘুম পারাতে হবে। দাদাজান সবাই কে থামিয়ে বলল কি এমন বয়স হয়েছে যে গল্প শুনতে পারবে না। আচ্ছা খেয়ে বারান্দা গিয়ে বসো আমি গল্প শুনাব।
দাদাজান যখন গল্প শুনাবে বলে এলেন তখন চাচাতো ভাই বোন গুলো এসেও গোল করে বসেছে । দাদা বলতে শুরু করলেন – তখন আমার চাকরি হয় নি তবে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ চাকরির জন্য পরিক্ষা দিয়ে গোপালগঞ্জ জেলায় প্রথম হয়েছিলাম আর কাগজ পত্র নিয়ে ছোটাছুটি চলছে। ১৯৭৫ সালের কথা তখন তো সরকারি চাকরি হতে এতো ঝামেলা পোহাতে হতো না। এমনই এক কাজে ঢাকা গেলাম কাগজপত্র নিয়ে। উঠলাম মামাতো ভাই রফিকের বাসায়। তার বাসা সোবাহান বাগে।
তখন তো যাত্রা এতো সহজ ও ছিল না খুব ক্লান্ত হয়ে পরেছিলাম তাও মামাতো ভাইয়ের সাথে অনেক দিন পরে দেখা গল্প করতে করতে বেশ রাত হলো। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি কথা বলতে বলতে খেয়াল নেই। সকালে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে ধরফড়িয়ে উঠলাম, কয়েক বছর আগে যুদ্ধ হলো তাই এসব খুব বেশি ভয় লাগতো না। শুনে শুনে অভ্যস্ত হয়ে পরেছিলাম। যা হোক কি হয়েছে দেখার জন্য রফিক দ্রুতো জানালার কাছে গেল।
রফিকের ঘরটা মেইন রোডের পাশেই ছোট একটা গলির মুখে। আমি বললাম এটা তো মনে হচ্ছে ট্যাঙ্ক এর শব্দ। আমি উঠে প্রচণ্ড হতাশা নিয়ে জানালায় তাকিয়ে দেখলাম রাস্তা পুরোপুরি ফাকা, কিছু সময় পর পর দু একটা মিলিটারির গাড়ি যাচ্ছে। তারপর সে খুব উৎসুক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল মিলিটারিরা ঘিরে রেখেছে বত্রিশ নম্বর।
কিছু ক্ষণ পর রেডিওতে মেজর ডালিম নামে কেও একজন ঘোষণা দিলো শেখ মুজিব কে হত্যা করা হয়েছে এবং তার পরিবারের কেউই বেঁচে নেই। আমার যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে কস্ট হচ্ছিল যে শেখ মুজিব আমাদের জন্য এত কিছু করলো তাকেই আমাদের দেশের সেনাবাহিনী মেরে সিড়িতে ফেলে রেখেছে ! আমার ভেতরটা দুলে উঠলো। রফিকের বারণ সত্ত্বেও সব কাজ ফেলে রেখে ফিরে চলে এলাম আর কোনো দিন আমি ধানমন্ডি বত্রিশের (dhanmandi) আসে পাশেও যাই নি।
তখন তো যাত্রা এতো সহজ ও ছিল না খুব ক্লান্ত হয়ে পরেছিলাম তাও মামাতো ভাইয়ের সাথে অনেক দিন পরে দেখা গল্প করতে করতে বেশ রাত হলো। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি কথা বলতে বলতে খেয়াল নেই। সকালে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে ধরফড়িয়ে উঠলাম, কয়েক বছর আগে যুদ্ধ হলো তাই এসব খুব বেশি ভয় লাগতো না। শুনে শুনে অভ্যস্ত হয়ে পরেছিলাম। যা হোক কি হয়েছে দেখার জন্য রফিক দ্রুতো জানালার কাছে গেল।
রফিকের ঘরটা মেইন রোডের পাশেই ছোট একটা গলির মুখে। আমি বললাম এটা তো মনে হচ্ছে ট্যাঙ্ক এর শব্দ। আমি উঠে প্রচণ্ড হতাশা নিয়ে জানালায় তাকিয়ে দেখলাম রাস্তা পুরোপুরি ফাকা, কিছু সময় পর পর দু একটা মিলিটারির গাড়ি যাচ্ছে। তারপর সে খুব উৎসুক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল মিলিটারিরা ঘিরে রেখেছে বত্রিশ নম্বর।
কিছু ক্ষণ পর রেডিওতে মেজর ডালিম নামে কেও একজন ঘোষণা দিলো শেখ মুজিব কে হত্যা করা হয়েছে এবং তার পরিবারের কেউই বেঁচে নেই। আমার যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে কস্ট হচ্ছিল যে শেখ মুজিব আমাদের জন্য এত কিছু করলো তাকেই আমাদের দেশের সেনাবাহিনী মেরে সিড়িতে ফেলে রেখেছে ! আমার ভেতরটা দুলে উঠলো। রফিকের বারণ সত্ত্বেও সব কাজ ফেলে রেখে ফিরে চলে এলাম আর কোনো দিন আমি ধানমন্ডি বত্রিশের (dhanmandi) আসে পাশেও যাই নি।
বলতে বলতে দাদাজান উঠে চলে গেল। পরিবেশটা হুট করেই কেমন থমথমে হয়ে উঠেছে। যে যার মত শুতে চলে গেলাম।
সব জায়গা শুধু মাত্র সৌন্দর্য বিবেচনায় ঘুরতে যাওয়া হয় কিছু জায়গা থাকে যেখানে শ্রদ্ধায় মাথা নত করতে যেতে হয়। তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান এর সমাধি যেন এক পবিত্র তীর্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা এখানে আসেন তারা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি, আন্দোলন-সংগ্রাম, বর্ণাঢ্য জীবন ও ত্যাগ সম্পর্কে জানতে পেরে আনন্দিত, গর্বিত হন। বঙ্গবন্ধুর কবরের পাশে শ্রদ্ধা জানান, তার জন্য কাঁদেন। যে যার ধর্মমতে তার জন্য প্রার্থনা করেন।
গ্রামটি পাটগাতী ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে হলেও গ্রামের নামেই উপজেলা সদরের নাম হয়েছে টুঙ্গীপাড়া (tungipara)। গোটা টুঙ্গীপাড়াকেই (tungipara) আজ বদলে দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল। গোপালগঞ্জ (gopalganj) জেলা সদর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে শান্ত সুন্দর নিরিবিলি এই টুঙ্গীপাড়া (tungipara) গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম হয় বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের (bangabandhu sheikh Mujibur Rahman)।
আবার এই গ্রামেই প্রকৃতির মমতাঘেরা কোলে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স (Bangabandhu mausoleum complex) নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৯৯ সালের ১৭ মার্চ সমাধিসৌধের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। লাল সিরামিক ইট আর সাদা-কালো টাইলস দিয়ে গ্রিক স্থাপত্যশৈলীর আদলে নির্মিত সৌধের কারুকার্যে ফুটে উঠেছে বেদনা ও শোকের আবহ। কমপ্লেক্সের সামনের দু’পাশের উদ্যান পেরোনোর পরই বঙ্গবন্ধুর কবর। পাশেই তার বাবা-মায়ের কবর। এই তিন কবরকে ঘিরেই নির্মাণ করা হয়েছে মূল স্থাপনা।
২০০১ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকন্যা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (sheikh haseena) এ সমাধিসৌধের উদ্বোধন করেন। কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে পাঠাগার, গবেষণাকেন্দ্র, প্রদর্শনী- কেন্দ্র, মসজিদ, পাবলিক প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, উন্মুক্ত মঞ্চ, বকুল-তলা চত্বর, স্যুভেনির কর্নার, প্রশস্ত পথ, মনোরম ফুলের বাগান ও কৃত্রিম পাহাড়।
মাজার কমপ্লেক্সের পাঠাগারে দেড় হাজারেরও বেশি বই রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ‘আমার কিছু কথা’, শেখ হাসিনার লেখা ‘আমার পিতা শেখ মুজিব’, ‘ওরা টোকাই কেন’ প্রভৃতি গ্রন্থ।
বিনম্র শ্রদ্ধা যার ত্যাগ আর শ্রমের বিনিময়ে পেয়েছিলাম এই স্বাধীন আর সোনার বাংলাদেশ (bangladesh)। আফসোস তাকে ধরে রাখতে পারি নি।