অমিতা তখন একটি নদের প্রেমে …

0
187
Ajay river
ওই যেমন হয়। তিনি যখন ক্লাস এইটে, টুয়েলভের সৌমিত্রদার প্রেমে পড়লেন। না না, সে সব এযুগের হোয়াটসএপ ফেসবুকের চ্যাট চ্যাটানো প্রেম না। কোএড স্কুলের শুধু চাউনি সার প্রেম। মুখ টিপে হাসি ফ্রি। এর বেশি এগোতে পারেন নি। সৌমিত্রদা ডাক্তারি পড়তে চলে গেল। তার পর টুয়েলভে দেখা হোলো দাদার বন্ধুর সাথে। সে সব হোলো কিছু দিন। 
Ajay river
কলেজে ঢুকে প্রেমে পড়লেন এক আধবুড়ো প্রফেসরের। এক সাথে ডেলি প্যাসেঞ্জারি। মুশকিলটা ছিল তাদের বিষয় এক না হওয়াতে ক্লাসে বসে দর্শন সুখ হচ্ছিল না। দুজনারই। তাদের এই দৃষ্টি সচেতকতা অন্যদের নজর এড়তে পারেনা। ফল, বান্ধবীদের মধ্যে সেই ঠারে ঠারে কথা। পথ চলার সময় দুজনের মুখোমুখি হলে অহেতুক গম্ভীরতা। সম্পর্কটা বাড়তে পারার সুযোগ ছিল না। কিন্তু তাই বলে ভালোলাগাটা মিথ্যা হয়ে যায় না। এ রকম আরও খান কতক ছিল।
Ajay river
অমিতা হিসাব করে দেখেছেন তার ভালোলাগা সব পুরুষের পুরুষ্টু গোঁফ ছিল। তাহলে কি তিনি গোঁফের প্রেমে পড়তেন? বিয়েটা যদিও প্রেম করেই। কিন্তু এই প্রেমিকের সতেজ গোঁফ নেই। মাথায় চুলের আধিক্যও কম। বিয়ের পরেও প্রেমে পড়ার রোগ তার যায়নি। একদিন যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’ পড়ে কাঁদলেন। হিসাব করে দেখা গেল এই কবির গোঁফ ও দাঁড়ি আছে।
Ajay river
ফেসবুকের কল্যাণে তার বন্ধু সংখ্যাও কম নয়। মন দুর্বল করে দেওয়া পুরানো মানুষরাও আছেন। সেখানেও ওই গুঁফেল লোকেদের পোষ্টগুলো তার টাইমলাইনে প্রথমে আসে। যাদের সাথে তার কোনো দিন দেখাই হয়নি, এমন যেসব লোকেদের ছবি দেখে মন খারাপ বা ভালো হয় তার তাদের বেশিরভাগই গোঁফ যুক্ত। যে বুড়ো মানুষটা তাকে নিয়মিত ভালো বই-পত্র পত্রিকার খবর চালান করেন, তাঁরও গোঁফ বহাল তবিয়তে বর্তমান। চল্লিশ পেরিয়ে অমিতা প্রেমে পড়লেন এক ফটোগ্রাফারের। এক কবির। এক নাট্যকারের। এক গায়কের। আর এক চিটিংবাজের। সবার গোঁফ আছে। 
Ajay river
এহো বাহ্য, এই অমিতাই প্রেমে পড়লেন ভরা গ্রীষ্মের দুপুর রোদের। ভাদর মাসের স্রোতের। ভোরের কুয়াশায়। শীতের ঠাণ্ডা জলের আর বিকেলের আলোর। অমিতা প্রেমে পড়লেন তার একাকিত্বের। গাছের ছায়া তাকে আরাম দিল। অজয় নদীর (ajay river) জলে শুনতে পেলেন নিজের স্বর। নদী পথের বাঁক তাকে জীবনের কথা শোনালো।
Ajay river
একদিন অমিতা অজয় নদীর (ajay river) পাড়ে বসে ছিলেন মেয়েকে নিয়ে। তিনি নাচ শিখেছেন যত্ন নিয়ে। মেয়েকেও শিখিয়েছেন নিজে হাতে ধরে। মোবাইলে হরিপ্রসাদের বাঁশির সুর বাজছিল। নদীর স্রোতের আওয়াজে সে সুর মাঝে মাঝেই মিলে মিশে একাকার। অমিতা মেয়েকে নিয়ে সরে এলেন মানুষজন থেকে একটু দূরে, যেখানে আড়াল আছে পাথরে। মেয়েকে দর্শক রেখে শুরু করলেন নদী ও বাঁশির যুগল বন্দীর সাথে কত্থক…  
 
পায়ের তলায় বালি থাকাতে ঠেকার আওয়াজটা আসছিল না। কিন্তু জল বইছিল তার নাচের ছন্দে… অমিতা প্রেমে ভাসছিলেন…
Ajay river

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here