সালজবুর্গকে কোনওদিন ভুলতে পারব না

0
203
Salzburg Austria

দেশ-বিদেশ ঘুরতে কার না ভাল না লাগে? আমার তো লাগেই। বাবা ছিলেন সরকারী চাকুরে। সেই সুত্রে আজ এখানে তো কাল ওখানে। আত্মীয়স্বজনরা বলত, তোদের তো পায়ে সর্ষে লাগানো আছে রে। বিয়ের পর ঘোরার বহর আরো বেড়েছে। আগে বাবা, এখন কর্তা, সঙ্গে আমাদের পুঁচকে মেয়ে। আমেরিকা, ইওরোপের বেশ কিছু দেশ, আফ্রিকা কিংবা আমাদের এশিয়ার অনেক দেশে গিয়ে দু’চোখ ভরে অচেনার আনন্দকে উপভোগ করেছি। শিখেছিও অনেক। ভ্রমণ যে শিক্ষার একটা বড় মাধ্যম তা ঘর থেকে না বেরোলে বোধহয় তেমনভাবে আত্মস্থ করতে পারতাম না।

আজ লিখতে বসে কেন জানিনা অস্ট্রিয়ার (austria) কথা খুব মনে পড়ছে। ২০১৪ সালের এপ্রিল-মে মাসের কথা। ছোট দেশ। বিশ্বের প্রথম ২৫টা ধনী দেশের একটি। ওই সময় ৮ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিল। আমাদের কোলকাতায় এই তাপাঙ্ক হলে আমরা তো একেবারে জবুথবু, কিন্তু ওদেশে ভিজে আর ঠান্ডা হাওয়াটা বেশ ভালো লাগছিল। অনেকেই অস্ট্রিয়ার (austria) কথা বলতে শুরু করলে রাজধানী ভিয়েনার (vienna) কথা বেশি করে বলেন। ভিয়েনার কথা না হয় অন্য দিন বলব। আজ বলব অস্ট্রিয়ার চতুর্থ বড় শহর সালজবুর্গ-এর (salzburg) কথা।

আমরা সালজবুর্গে (salzburg) পুরো দুটো দিন কাটিয়েছি। এখানে আছে সল্ট মাইন (the name “salzburg” literally means the “salt fortress“)। মানে নুনের খনি। অনেকের মত আমরাও নুনের খনিতে নেমেছিলাম। খনিতে নামতে হলে ওদের দেওয়া পোষাক পরে নামতে হয়।।তবে ৬০ফুটের বেশী নামার অনুমতি ছিল না।

salzburg

সালজবুর্গ (salzburg) পূর্বতন রোমানদের (roman) জায়গা। এর ফলে আছে অসংখ্য গির্জা আর উপাসনালয়। দেখেছি ১৫০০ বছরের প্রাচীন এই শহরের মাঝখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ইওরোপের সেরা ক্যাসল। ফোস্টানবার্গ (fostenburg) থেকে প্রায় সাড়ে ছ’শো ফুট ছোট্ট পাহাড়ে উঠতে শুরু করার মিনিট কুড়ির মধ্যেই পৌঁছনো যায়। তবে আপনি গাড়ি করেও যেতে পারেন। ওখানে আর্চবিশপের বাড়ি। তিনিই পরে শহরটাকে সম্প্রসারণ করেন।

ইওরোপের ৮টি দেশ নিয়ে ১২০০ কিমি’র অ্যালপাইন (alpine) পর্বতমালা, তার দক্ষিণ দিকে অস্ট্রিয়া (austria)। ১৭ শতাব্দীতে খিস্টধর্মের প্রোটেসস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিকদের ধর্মযুদ্ধের পর অসংখ্য গির্জা স্থাপন হয়। এক একটি গির্জার এক এক রকমের স্থাপত্য সৌন্দর্য। কোনোটার আদল আমাদের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মত, কোনটা যেন দিল্লির সাংসদ ভবন। চোখ জুড়িয়ে যায়। তৈরি হয়েছে ২৭টি গির্জা। এই অসাধারণ সব স্থাপত্যকীর্তির স্বীকৃতি হিসেবে সালজবুর্গ (salzburg) ১৯৯৬ সালে ইউনেস্কোর (UNESCO) বিচারে বিশ্ব হেরিটেজ শহরের (best heritage city) মর্যাদা পেয়েছে।

salzburg

হোটেলের মধ্যবয়সী কর্মী আমাদের সালজবুর্গ-এর (salzburg) একটা গাইড বই দিয়েছিলেন। কিন্তু আগাগোড়া জার্মান ভাষায় লেখা বলে এক বর্ণও বোধগম্য হয়নি। আসলে এখানকার সরকারী ভাষা জার্মান (german)। আমরা যে কিছুই বুঝতে পারিনি সেটা ওই হোটেল কর্মীটিও বুঝেছিলেন। এরপরই সহৃদয় মানুষটি ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বলেছিলেন, যদি পারেন, তাহলে সালজবুর্গের হিস্টোরিক সেন্টারটা একবার দেখে নেবেন। 

বাইরে থেকে দেখতে গেলে যেন একটা ছোটখাট টাইটানিক জাহাজ। টিকিট কেটে ভেতরে যেতেই শুধু চমক আর চমক। স্থাপত্য, সঙ্গীত, নৃত্য, কলা এবং সংস্কৃতির কী বিশাল ও অপরূপ সাম্রাজ্য। সত্যি বলতে কি আমরা একদিনে সব দেখে উঠতে পারিনি।

এই শহরেই জন্ম বিশ্ববরেণ্য সঙ্গীত পরিচালক মোৎসার্টের (mozart)। বাড়ির বাইরের চত্বরে তাঁর পূর্ণ প্রতিকৃতি। সম্রাটের অধীনে ১৭৭৩ থেকে ১৭৮১ সাল পর্যন্ত চাকরি করেছেন। মোৎসার্টের (mozart) ব্যবহার করা অসংখ্য সব বাদ্যযন্ত্র ঘরে ঘরে থরে থরে সাজানো। রয়েছে কয়েকশো পান্ডুলিপি। সবই সংগীতের। সুরের জাদুকরকে নিয়ে এক আলাদা জগৎ।

আমাদের খুব ইচ্ছা ছিল, যুগান্তকারী চলচ্চিত্র ‘সাউন্ড অফ মিউজিক’-এর (sound of music) লোকেশনে গিয়ে সেই বাড়িটা দেখে পরদিন ওখানকার গ্রাম দেখতে যাব। সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ে প্রথমে গেলাম সাউন্ড অফ মিউজিক ছবির লোকেশন দেখতে। ১৯৬০ সালে নির্মিত ছবির বাড়ির সামনে কিন্তু দুটো পুল দেখতে পেলাম না! সিনেমায় দুটোই দেখেছিলাম। তবে বাড়ির দু দিক দিয়েই দোতলায় যাবার সিঁড়ি অবশ্য আছে। 

এরপর আমাদের গন্তব্য Hallstatt গ্রাম। সালজবুর্গ (salzburg) থেকেই যেতে হয়। প্রথমে বাসে করে মনোমুগ্ধকর ছবির মত প্রাকৃতিক দৃশ্য পেরিয়ে পৌঁছলাম রেলওয়ে স্টেশনে। এরপর ট্রেন।

salzburg
Salzburg

জানতাম না যে ট্রেন থেকে নেমে আবার ফেরি পার হতে হয়। দশ মিনিট লাগল ফেরিতে। ছোট্ট একটা গ্রাম। চারিপাশে পাহাড়, মাঝখানে লেক। গ্রামটা পুরো পায়ে হেঁটেই ঘোরা যায়। আমাদের গাঁ-গঞ্জের সঙ্গে বিস্তর ফারাক। কোনও মিল খুঁজতে যাওয়াটাই বোকামি। গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে একটা কফি শপে ঢুকে কফি পান করলাম। ট্রাডিশনাল পোষাক পরে মহিলারা কফি পরিবেশন করলেন। এটাই এখানকার বিশেষত্ব। আমাদের দেশের গ্রামে কফি শপ, কিংবা মহিলারা কফি পরিবেশন করছেন? জাস্ট ভাবাই যায় না।

ক্লান্ত শরীর নিয়ে হোটেলে ফিরে শুকনো খাবার ছাড়া বেশি কিছু খেলাম না। সব কিছু গুছিয়ে নিলাম। পরের দিন সকালে সালজবুর্গকে (salzburg) যে বিদায় জানাতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here